Trending News

রাজ্যের সবজি চাষীদের জন্য শুরু হলো নয়া Farmer App, শনাক্ত করা যাবে আবহাওয়া এবং ফসলের ভবিষ্যৎ ফলন

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষকদের উদ্দেশ্যে সরকারের তরফে শুরু করা হয়েছে একাধিক প্রকল্প এবং Farmer App। বর্তমানে প্রযুক্তির জগতে হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কৃষকদের জীবনকে আরো বেশি উন্নত এবং নিশ্চিত করে তুলেছে...

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিপুল সংখ্যক কৃষকের বসবাস। আর তাদের নিত্যনতুন সমস্যা এবং চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার যথেষ্ট ভাবে তৎপর রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষকদের উদ্দেশ্যে সরকারের তরফে শুরু করা হয়েছে একাধিক প্রকল্প এবং Farmer App। বর্তমানে প্রযুক্তির জগতে হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কৃষকদের জীবনকে আরো বেশি উন্নত এবং নিশ্চিত করে তুলেছে।

এতদিন পর্যন্ত যে অনিশ্চয়তার সঙ্গে প্রতিটি কৃষককে দিন যাপন করতে হতো, বর্তমানে সেই কৃষকদের জন্যই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ (Farmer Mobile App)। এই অ্যাপ গুলোর সাহায্যে চাষের দ্বারা উৎপাদিত ফসলের বাজার মূল্য, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সরকারি বিভিন্ন ভর্তুকি (Subsidy) সহ একাধিক বিষয় সম্পর্কে একটি ক্লিকেই জানা সম্ভব হয়। তাই আজকের প্রতিবেদনের রাজ্যের কৃষকদের জন্য তৈরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল অ্যাপগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রইল।

১) কিষান সুবিধা অ্যাপ (Kisan Suvidha Farmer App)

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহায়তায় ভারতে কিষান সুবিধা নামের এই অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র ভারতবর্ষের কৃষকদের জন্য আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস, স্থানীয় বাজারে সবজির দাম, বর্তমান আবহাওয়ার বিশেষত্ব এবং কৃষি সংক্রান্ত একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ কৃষকদের সহায়তার জন্য এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় উপলব্ধ রয়েছে। এর ফলে কৃষকেরা সহজেই নিকটতম মন্ডিতে সবজির, জমিতে ব্যবহৃত সার, বীজ এবং কীটনাশক সম্পর্কিত একাধিক তথ্য নিজের ভাষায় বুঝে নিতে পারবেন।

২) কৃষি জাগরণ (Krishi Jagran) মোবাইল অ্যাপ

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ, ফসল সুরক্ষা এবং সরকারি ভর্তুকি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করার জন্য এই মোবাইল অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়েছে। রাজ্যের সবজি চাষীদের জন্য ফসল ক্যালেন্ডার থেকে শুরু করে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ এবং আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য বাংলা ভাষার এই অ্যাপটির সাহায্যে জেনে নিতে পারেন গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের কৃষকেরা। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা যায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। রাজ্যের কৃষকেরা এই একটি অ্যাপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সম্মান নিধি বা মাটি স্বাস্থ্য কার্ড এর মত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি প্রকল্পগুলিতে সরাসরি আবেদন জানাতে পারেন।

৩) দেহাত ফার্মার অ্যাপ (DeHaat Farmer App)

ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভা আরো বারোটি রাজ্যে বসবাসকারী চোদ্দ লক্ষ কৃষকের মধ্যে বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেহাত ফার্মার অ্যাপ (DeHaat Farmer App)। সবজি চাষীদের বাজার সংযোগ, ভর্তুকি এবং ফসল পরামর্শের মতো একাধিক তথ্য প্রদান করা হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে। এই মোবাইল অ্যাপটি কৃষকদের উচ্চ মানের বীজ, সার এবং কৃষিজ যন্ত্রপাতি ক্রয় করায়ে সহায়তা করে থাকে। এর পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে কৃষিজাত পণ্য বাজারে বিক্রয় করা এবং জিপিএস ভিত্তিক আবহাওয়া তথ্য প্রদান করার মতো কাজগুলিতেও সহায়তা দেওয়া হয় দেহাত ফার্মার অ্যাপ (DeHaat Farmer App) এর মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গের চাষীরা এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ব্যবহার করতে পারেন।

৪) প্ল্যান্টিক্স (Plantix) Farmer App

আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চালিত মোবাইল অ্যাপ প্ল্যান্টিক্স (Plantix)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এই এক সবজি চাষীদের ফসলের রোগ এবং কীটপতঙ্গ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সনাক্ত করতে সহায়তা করে। এই অ্যাপের ক্ষেত্রে কৃষকেরা তাদের ফসলের ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করলেই সেই ফসলের রোগ এবং কীটপতঙ্গের ধরন শনাক্ত করে তার সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি উন্নত চার্জ এবং জৈব ও রাসায়নিক বিভিন্ন সমাধানের পরামর্শ পাওয়া যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। এই অ্যাপটিও পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ব্যবহার করতে সক্ষম।

৫) এগ্রিমার্কেট মোবাইল অ্যাপ

ভরত সরকারের উদ্যোগে চালু হওয়া এগ্রিমার্কেট অ্যাপটি কৃষকদের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত বাজারে সবজির দাম জানার জন্য সহায়তা করে। এর ফলে যথাযথ মূল্যের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রয় করার সুযোগ পান। এর পাশাপাশি জিপিএস প্রযুক্তির সহজে কৃষকদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় মন্দির দাম প্রদান, ঢেঁড়স, টমেটো বা ফুলকপির মত সবজির দাম ট্র্যাক করা, বিক্রির জন্য সময় নির্ধারণ করা ইত্যাদিতেও সহায়তা করে এই অ্যাপ।

মোবাইল অ্যাপগুলি ব্যবহারের সমস্যা

বেশিরভাগ সময়েই এই ধরনের মোবাইল অ্যাপ গুলো চালানোর জন্য যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়, তার জন্য যথেষ্ট নেটওয়ার্ক থাকে না রাজ্যের গ্রামীন এলাকা গুলিতে। এর পাশাপাশি কৃষকদের কাছে স্মার্টফোনের সীমিত ব্যবহার এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম না জানার কারণেও এই সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারেন না রাজ্যের কৃষকেরা। এই কারণে বর্তমানে রাজ্যের একাধিক জায়গায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে রাজ্য প্রশাসন। পাশাপাশি গ্রামীণ ইন্টারনেটের কাঠামো উন্নত করার প্রচেষ্টাও চলছে ক্রমাগত।

Farmer App ব্যবহারে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা

উল্লেখিত মোবাইল অ্যাপগুলি ব্যবহার করার মাধ্যমে যে কৃষকেরও শুধুমাত্র আবহাওয়া বা বাজার মূল্য সম্পর্কে অবগত হতে পারেন তাই নয়, বরং রাজ্যের কৃষকদের সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় একাধিক সহায়তা প্রদান করে এই মোবাইল অ্যাপগুলি। এর পাশাপাশি গ্রামীণ স্তরে যেখানে রাজ্যের বা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের খবর গিয়ে পৌঁছয় না, সেই জায়গাতেও প্রকল্পগুলির সুফল পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই মোবাইল অ্যাপ (Farmer App) ব্যবহার করে রাজ্জাক কৃষকেরা উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি কাজ শিখতে সক্ষম হচ্ছেন।

কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতি

শুধুমাত্র মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই নয় বর্তমানে বিভিন্নভাবে কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছে সরকার। ভবিষ্যতে এই অ্যাপগুলির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ব্লক চেইন (Block Chain) বা অগমেন্ট রিয়্যালিটির মতো উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষি পদ্ধতিকে আরো বেশি উন্নত করা যেতে পারে। এমনকি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই (AI) চালিত অ্যাপগুলি ফসলের ফলনের পূর্বাভাস দিতেও সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রের এই অ্যাপে ব্লকচেইন ফেসিলিটি থাকলে, তা কৃষি ক্ষেত্রের সাপ্লাই চেইনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র এবং রাজ্য স্তরে একাধিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং কৃষকদের আর কোন কোন ভাবে সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে ও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে সরকারের তরফে।

এক কথায় বলতে গেলে, কৃষকদের বিশেষত বাংলার কৃষকদের জন্য অভিনব উদ্যোগ এই মোবাইল অ্যাপ। কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে বাজার দরজা যেন এমনকি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে কৃষকদের নিশ্চিত করার সমস্ত প্রক্রিয়া রয়েছে এই অ্যাপগুলিতে। বর্তমানে কিষান সুবিধা, এগ্রিমার্কেট বা প্লান্টিক্স এর মত অ্যাপগুলি কৃষি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে বিপ্লব ঘটাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র যে ভবিষ্যতের কৃষি ক্ষেত্রেই এই অ্যাপগুলি সহায়তা করবে তা নয়, বর্তমানের কৃষকদেরও একাধিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলি।

কৃষকদের ভবিষ্যৎ

এই সমস্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ফসলের ক্ষতির হ্রাস এবং রাজ্যের কৃষকদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ফারাক দেখা দিয়েছে। বঙ্গ রাজ্যের কৃষকদের জন্য এই মোবাইল অ্যাপগুলি ডিজিটাল কৃষির নতুন যুগের সূচনা করে দিয়েছে। তবে বর্তমানে রাজ্যের সরকারকে এবং প্রশাসনকে গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিতেও এই সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূলত কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, মোবাইলের ব্যবহার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে সহজেই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে গ্রামীণ কৃষকদের। যদিও এই বিষয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট পরিমাণেই উদ্যোগী হয়ে আছে।

Miss Basu

সৃষ্টি বসু! WB Tathya সাইটের কন্টেন্ট রাইটার। বিগত ৬ বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট লিখছেন। বারাসাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্টস নিয়ে স্নাতক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button