বর্তমানে উচ্চ অর্থনীতির বাজারে বেশিরভাগ মানুষই আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। এই উচ্চ মূল্যের বাজারে টিকে থাকাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রত্যেক দিন প্রায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে অতিরিক্ত খরচ হিসাবে চিকিৎসা, সন্তানের পড়াশোনা, উপরতি হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান তো লেগেই আছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই এখন সবচেয়ে বড় কঠিন মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে।
রোজকার দিনের জীবনযাত্রা কোনোভাবে চালিয়ে নিতে পারলেও হঠাৎ করে কোন সমস্যা তৈরি হলে একসঙ্গে অনেকটা টাকা যোগাড় করা মানুষের কাছে খুবই সমস্যাজনক হয়ে পরে। হঠাৎ এই সমস্যার সমাধান একমাত্র সামাল দেবার জন্য লোন-ই একমাত্র উপায়। কিন্তু সেটি পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন নিয়ম নীতি বিধি নিষেধ ইত্যাদি মেনে চলতে হয় তার জন্য সময় লাগে।
লোন পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বাধা নিষেধ আছে। তবে এই সমস্যার থেকে কিছুটা সুরাহা পাওয়ার জন্য একটি উপায় ভারত সরকার করেছেন, তা হল আপনার কাছে যদি প্যান কার্ড থাকে তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন ঘরে বসেই পেতে পারেন।
প্যান কার্ড থেকে লোন পাওয়া যায়? কিভাবে সেটা সম্ভব! জেনে নিন–
আপনার প্যান কার্ড যদি আধার কার্ডের সঙ্গে লিংক করা থাকে এবং কে.ওয়াই.সি. (KYC) খুব সহজেই করানো সম্ভব। এতে করে ব্যাংক বা যে সমস্যা থেকে আপনি লোন নিতে চাইছেন তারা খুব সহজেই আপনার পরিচয় পত্র দ্রুত যাচাই করে লোনের জন্য আপনাকে যোগ্য সেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারেন।
প্যান কার্ডে কত টাকা লোন পাওয়া যায় এবং সুদের হার–ই বা কত?
প্যানকার্ডের ক্ষেত্রে যে লোন পাওয়ার সুবিধা তা ৫০০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক লোন পাওয়ার সুবিধার ব্যবস্থা আছে তবে এটি নির্ভর করছে আপনার আয়, ক্রেডিট স্কোর এবং আর্থিক অবস্থার উপর।
যেকোনো লোনের ক্ষেত্রে সুদ দিতে হয়। এক্ষেত্রেও আপনাকে সুদ অবশ্যই দিতে হবে। এই সুদের হার আপনার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করবে। সুদের হার ১০.৫% থেকে ২৪% পর্যন্ত হতে পারে।
লোনের টাকা কোথায় কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন? জেনে নিন-
প্যান কার্ড থেকে যে লোন পাবেন তা জরুরী কিছু ভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে যেমন হঠাৎ চিকিৎসার ক্ষেত্রে দরকার হলে অথবা সন্তানের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অথবা বিএ বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান বা ঘর মেরামতের কাজে বিদেশ যাত্রা অথবা ব্যবসায় পুঁজি লোকনির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন।
এই লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আপনাকে মানতে হবে-
এই লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ২১ থেকে ৬০ এর মধ্যে হতে হবে। আপনার কাছে অবশ্যই একটি বৈধ প্যান কার্ড থাকতে হবে যা আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক থাকা দরকার। আবেদনকারী কে আয়ের উৎস দেখাতে হবে। একটি ভালো সিভিল স্কোর থাকতে হবে যা সাধারনত ৭৫০+ হলে ভালো হয়। পূর্বে কোন লোন নিয়ে থাকলে সেটি সময় মতো যদি পরিশোধ করার রেকর্ড থাকে তাহলে লোন পেতে সুবিধা হবে।
ক্রেডিট স্কোর কি এবং লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কেন এত জরুরী?
প্যান কার্ড দেখিয়ে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেডিট স্কোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যেটি আপনাকে লোন পেতে সাহায্য করবে। এই স্কোর বোঝাবে যে আপনি কত ভালো পূর্বে নেওয়া কোন লোন সময় মত পরিশোধ করেছেন বা আপনার সেই অভ্যাস আছে। কোর ৩০০ থেকে ৯০০ পর্যন্ত হতে পারে যত বেশি স্কোর হবে তত লোন তাড়াতাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হবে।
স্কোর ভালো থাকলে কি সুবিধা জেনে নিন–
স্কোর যদি ভালো থাকে তাহলে দ্রুত লোন স্যাংশন হয়, লোনের হার কম হয় এমনকি লোন খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
স্কোর খারাপ হলে এর বিপরীত বিষয় ঘটবে অর্থাৎ লোন রিজেক্ট হতে পারে, সুদের হার বেড়ে যেতে পারে বা লোন পেতে আরো বেশি সময় লাগতে পারে।
প্যান কার্ডের লোনের আবেদন কিভাবে করতে হয় জেনে নিন-
প্যান কার্ডের লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন এবং অফলাইন দুটিরই সুবিধা আছে।
অনলাইনে আবেদনের জন্য
- আপনার নিজস্ব ব্যাংক বা এনবিএফসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- এরপর প্যান এবং আঁধার সংক্রান্ত যে সমস্ত তথ্য যা হয়েছে তা সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ও.টি.পি. যাচাই যথাযথভাবে করুন।
- লোনের পরিমাণ এবং সময়সীমা নির্ধারণ করে দিন।
- ইনকাম এবং কেওয়াইসি যাচাইয়ের পর অ্যাপ্রুভাল হয়।
- সমস্ত কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় লোন একাউন্টে পেয়ে যাবেন।
অফলাইনে আবেদনের জন্য
- আপনার নিকটস্থ ব্যাংকে গিয়ে ফরম ফিলাপ করুন
- তারপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিন এবং
- ব্যাংকে যথাযথভাবে যাচাইয়ের পর ঋণ অনুমোদন হলে আপনার একাউন্টে টাকা ঢুকবে।
লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা পালন করা জরুরি, কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ভালোভাবে জেনে নেবেন
- লোন নেওয়ার আগে এর সঙ্গে যে সমস্ত শর্তাদি রাখা হয়েছে তা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
- ব্যাংকে যে সমস্ত লোকানো চার্জ থাকে সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- ই.এম.আই. (EMI) যথাযথ সময়ে দিন, না হলে স্কোর খারাপ হলে বা কমে গেলে তার বোঝা আপনার ঘারেই চাপবে।
- সুদের পরিমাণ বেশি হলে ভালো করে যাচাই করে তবেই লোনের জন্য আবেদন করুন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোন না নেওয়াই ভালো তাতে বিপদে আপনি পড়বেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, সুদের হার একটু বেশি হলেও শুধুমাত্র প্যান কার্ড দিয়ে যে লোন পাওয়া সম্ভব যা আপনাকে বিপদের সময় রক্ষা করতে পারবে সেটি ভারত সরকারের একটি উত্তম উদ্যোগ। হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে টাকার অভাবে সমস্যা হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে একটি আর্থিক সঙ্গতির সুযোগ ভারতীয়দের হাতে আছে যা অনেকটা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সময় মত লোন পরিশোধ করাটাও গ্রাহক বা আবেদনকারীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে। ঋণ নিলে আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে সেটি মাথায় রেখে প্রয়োজনের সাপেক্ষে ঋণের পথে আগান।
Disclaimer:
এই প্রতিবেদনটি কোন ভাবেই কোনো ভারতীয় নাগরিককেই লোন নেওয়ার প্ররোচনা দিচ্ছে না ভারতের অধিবাসীদের জন্য যে সুবিধা আছে সেটি একমাত্র জানানোর জন্য এখানে এই বিষয়গুলি তুলে ধরা হলো।