New Traffic Rule 2025 – এখনই জেনে নিন নতুন নিয়ম। ২ কিংবা ৪ চাকা গাড়ি নিয়ে পরিবহন মন্ত্রকের নয়া নিয়ম জারি করা হয়েছে, যা না মানলে ৫ গুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
দিনে দিনে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে সেরকম ভাবে রাস্তায় গাড়ি সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু অসাবধানতার জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নতুন আইন 2025 সালে আসতে চলেছে। বিশেষত দু’ চাকা এবং চার চাকার জান চালকদের জন্য এই আইন গুলি বেশি প্রাসঙ্গিক।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত এই নিয়মগুলি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা তৈরি করে নেওয়া এবং তার সঙ্গে অন্যদেরকেও এই আইন গুলি জানানো। এটি তখনই সম্ভব যদি প্রত্যেকটি নাগরিক নিজে এই নিয়মগুলি মেনে পরিবহন ব্যবস্থাকে এবং তার ব্যবস্থাপনায় যে সমস্ত আধিকারিকরা আছেন তাদেরকে সাহায্য করে পথ চলতি সাধারণ মানুষের জীবন সুরক্ষিত করে।
বিনা ছাড়া গাড়ি চালালে কি জরিমানা হতে পারে। দেখে নিন
বর্তমানে নিয়ম যেগুলি চালু করা হয়েছে তার মধ্যে গাড়ির বীমা অন্যতম। গাড়িতে যদি বিমান না থাকে এবং প্রথমবার যদি চালক সেই অবস্থায় ধরা পড়েন তাহলে জরিমানা ২০০০ টাকা এবং দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত তাকে গুনতে হয়।
কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী সেই জরিমানার হার দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। প্রথমবার বিনা ছাড়া ধরা পড়লে জরিমানা হবে বেসিক প্রিমিয়ামের তিনগুণ এবং দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে জরিমানা বাড়বে বেসিক প্রিমিয়ামের ৫ গুন পর্যন্ত। এই নতুন নিয়ম জারি করে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এতে করে যেমন বীমা বিহীন যানবাহনের সংখ্যা কমবে, তেমনি এর সুবিধা কোন দুর্ঘটনার কবলে পড়া মানুষরা পেতে পারবেন।
জাতীয় সড়কের গতি নিয়ন্ত্রণে কি নতুন পরিবর্তন আনা হয়েছে দেখুন
পূর্বে জাতীয় সড়কের গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য ২ তরফেরই ভূমিকা থাকতো, তাই বিভিন্ন জায়গায় গতিসীমা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিত। কিন্তু এবার সেই সীমারেখা বিভাজন করে বিষয়টিকে স্পষ্ট করা হয়েছে এতে বিভ্রান্তি কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় সড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সড়ক ও শহরের রাস্তা গুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থাকবে রাজ্য সরকারের।
এতে যেমন সারাদেশে এক এবং অভিন্ন গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যাবে তেমনি চালকড়াও ভুল করে যদি গতির সীমা লংঘন করে তাহলে অকারনে তাদের জরিমানার মুখে পড়তে আর হবে না।
লাইসেন্স বিনিময়ের ক্ষেত্রেও কিন্তু কড়াকড়ি নিয়ম জারি হতে চলেছে
ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউয়ের ক্ষেত্রে এবার আসতে চলেছে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন। সাধারণভাবে লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আগে যে পদ্ধতি ছিল তা অনেক সহজ হলেও এখন বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট জটিল হতে চলেছে।
- গুরুতর ট্রাফিক অপরাধে লাগবে ড্রাইভিং টেস্ট এবং যা বাধ্যতামূলক- যদি কেউ মধ্যব্য অবস্থায় গাড়ি চালান এবং তার সাথে যদি খুব দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান অথবা বেপরোয়া ভাবে ড্রাইভিং করেন তাহলে পরবর্তী ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউয়ের সময় তাকে বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা দিতে হবে।
- ৫৫ বছর বয়সের বেশি চালকদের জন্য নিয়ম একটু আলাদা- বয়স বাড়ার সঙ্গে যেহেতু শারীরিক সক্ষমতা কমে এই বাস্তবতা কে মাথায় রেখে এবার ৫৫ বছরের বেশি বয়সী লাইসেন্স সময় ড্রাইভিং টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চালকদের জন্য বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পরিবহন দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে, কে সেই পরামর্শ দেখে নিন
নতুন নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক চালকের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে-
1. প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপডেট রাখুন। এই নথি গুলি হল বৈদ্য ড্রাইভিং লাইসেন্স, বৈধ ইন্সুরেন্সের কাগজপত্র, পলিউশন সার্টিফিকেট, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাগজপত্র।
2. গতিসীমা মেনে চলতে হবে- জাতীয় রাজ্য সড়ক উভয় ক্ষেত্রেই নির্ধারিত গতি সীমা বজায় রাখতে হবে।
3. সচেতন এবং নিরাপদ ড্রাইভিং এর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে- গাড়ি চালানোর সময় যদি মনে হয় আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তাহলে আর গাড়ি চালাবেন না, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাবেন না, ওভারটেক করার সময় সতর্কভাবে গাড়ি চালান, হেলমেট পড়ুন এবং হর্নের যথাযথ ব্যবহার করুন।
নতুন আইনের প্রবর্তন এর কি প্রভাব পড়তে পারে?
নতুন যে নিয়ম চালু করা হয়েছে তা পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্ভাব্য পরিবর্তন গুলির মধ্যে অন্যতম হলো-
- বিনা ছাড়া গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে চলেছে বলে আশা করা যায়।
- চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলার প্রবণতা বাড়বে বলে আশা করা যায়। দুর্ঘটনার পরে আর্থিক সহায়তার পাওয়ার সুবিধা বাড়বে।
- বয়স্ক চালকদের আরো নিরাপদ ড্রাইভিং নিশ্চিত হবে।
- সার্বিকভাবে পথ দুর্ঘটনার হার কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সচেতন থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন
- ট্রাফিক আইন কেবলমাত্র মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটি বোঝা নয় বরং প্রত্যেকটি নাগরের জীবনের সুরক্ষার জন্য একটি বিধি, যা মেনে চললে চালক এবং পথচারী এবং যাত্রী সবারই জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কমবে।
- নিত্যদিন কাজের জন্য মানুষকে বাইরে বেরোতেই হয় এবং তার জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে যান পরিবহন ব্যবস্থা এসবের সাহায্য নিতেই হয় এবং সেটা করতে গিয়ে যদি সাবধানতা অবলম্বন না করা যায় তাহলে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
- বাধ্যতামূলকভাবে মানুষকে কিছু নিয়ম বিধির মধ্য দিয়ে যদি মানুষকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে বড় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।
- এই বিধি নিষেধ তারই একটি সুরক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করে। আর্থিক জরিমানার মাধ্যমে মানুষকে বাধ্য করা হয় এই বিধি নিষেধ মানতে যাতে তাদেরই জীবনের ঝুঁকি কমে।
- এটি নিজের এবং আপনজনদের জীবনের নিরাপত্তা বাড়ানো বা সুনিশ্চিত করার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
- একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ও চালক হিসাবে শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই আপনি যদি ট্রাফিক আইন মেনে চলেন তাহলে এক দৃষ্টান্ত স্বরূপ কাজ করবেন যা দেখে বাকি চালকরাও ট্রাফিক নিয়ম অনুযায়ী মেনে চলে সাবধানতার সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে সচেতন নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে পারে এবং গোটা সমাজকেই সুরক্ষিত রাখতে পারে।
এক্ষেত্রে একটি অনুপ্রেরণা তৈরি হয়।
নিয়ম মানুন নিরাপদে চলুন এটি ভবিষ্যতের রাস্তায় চলার মূল মন্ত্র হোক-
নতুন ট্রাফিক আইন দ্বারা জরিমানা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষকে পরিবহন সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি মেনে চলতে বাধ্যতামূলক করা। যাতে অযথা অর্থ খরচ না হয় তাই সমস্ত কাগজপত্র যথাসময়ে সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং রাস্তার নিয়ম মেনে চলে প্রাণের ঝুঁকি কমিয়ে সমাজকে নিশ্চিন্ত করা। মনে রাখতে হবে আইন মানা মানেই সবাইয়ের জীবন রক্ষা করা।